রওজায়ে সেরহিন্দ
[হজরত ইমামে রব্বানী মুজাদ্দেদে আলফেছানী (রাঃ) এর জীবনবৃত্তান্ত]
লেখকঃ সৈয়দ খাওয়াজা নহির উদ্দীন আহমদ (নূহ্) কালিমী (মুদ্দাজিল্লুহুল আ’লী)
নিম্নে সংক্ষিপ্তভাবে রওজায়ে সেরহিন্দ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
রওজায়ে সেরহিন্দের অবস্থানস্থল
ডাকঘর ও রেলওয়ায়ে ষ্টেশনঃ ফতেহগড় সাহেব।
রাস্তাঃ বাসী পাঠানাঁ, রোপড়, নঙ্গল চন্ডিগড়, পথে।
সেরহিন্দের এলাকাভূক্ত জেলাঃ পাতিয়ালা, পাঞ্জাব।দরওয়াজায়ে আস্তানায়ে আ’লীয়া মুজাদ্দেদীয়া সেরহিন্দ শরীফ, পাঞ্জাব। দরওয়াজায়ে আ’লীয়া মুজাদ্দেদীয়া রওজা শরীফ সেরহিন্দ ১৩৪১ হিজরী মোতাবেক ১৯২২ খ্রীষ্টাব্দে শেঠদের দ্বারা নির্মিত।
সেরহিন্দ শহর
এই শহরটি দিল্লী ও লাহোরের ঠিক মধ্যভাগে অবস্থিত। বর্তমানে সেরহিন্দ শহর কয়েকটি ভাগে বিভক্ত। যেমন- সেরহিন্দ শহর, সেরহিন্দ মন্ডি, অথবা রেলওয়ে ষ্টেশন এবং রওজা শরীফ। সেরহিন্দ রেলওয়ে ষ্টেশন হইতে বাসী পাঠানাঁ অথবা রোপড় নঙ্গল গামী সড়ক পথে তিন মাইল দুরে ইমামে রব্বানী হজরত মুজাদ্দেদে আলফেছানী (রাঃ) এর সমুজ্জ্বল মাজার শরীফ, যাহাকে “সেরহিন্দ রওজা শরীফ” বলা হইয়া থাকে।
সেরহিন্দের নামকরণ ও বসতি স্থাপন
যেখানে বর্তমান সেরহিন্দ শহর অবস্থিত, সেখানে প্রাচীনকালে ভীতিপূর্ণ জঙ্গল ছিল। সেখানে সিংহ, বাঘ, ভালুক এবং অন্যান্য হিংস্র পশু বাস করিত এবং সেই ভয়াবহ জঙ্গলের নাম হিন্দি ভাষায় সাহর নাদ ছিল। হিন্দী ভাষায় সিংহকে সাহর’ এবং রান্দ’ জঙ্গলকে বলা হয়। এই জন্যই পূর্ববর্তী মুদ্রাসমূহে সাহর নাদই লিখা হইত।
‘সেরহিন্দ’ শব্দটি সাহার নাদ হইতে বিকৃত হইয়া গঠিত হইয়াছে; যাহার অর্থ সিংহের জঙ্গল। আসলেই ইহা সাহর নাদ, যেহেতু হজরত ইমামে রব্বানী মুজাদ্দেদে আলফেছানী (রাঃ) এবং তাঁহার পুত্রগণ যাঁহারা সিংহ সমতুল্য প্রত্যেকেই আল্লাহর সিংহ, এবং সকলেই এই শহরে জন্ম গ্রহণ করিয়াছিলেন।
বাদশাহ ফিরোজ শাহ তুঘলকের শাসনামলে, (হিজরী ৭৫২ সন হইতে ৭৮৫ সন মোতাবেক ১৩৫৮ খ্রীষ্টাব্দ হইতে ১৩৮১ খৃঃ পর্যন্ত) একবার শাহী কর্মচারীগণ শাহী ধন ভান্ডার লাহোর হইতে দিল্লী লইয়া যাইতে ছিলেন। তাঁহাদের ভিতর এক ওলী ছিলেন। যখন ধন ভান্ডার লইয়া উক্ত জঙ্গল অতিক্রম করিতেছিলেন, তখন কাশফের দ্বারা বুঝিলেন যে, সেই জঙ্গলে হজুর নবী করিম (দঃ) এর হিজরতের এক হাজার বছর পরে এক মহা সম্মানিত আল্লাহর ওলী জন্ম গ্রহণ করিবেন। যে লোকেরা শাহী ধন ভান্ডার লইয়া যাইতেছিলেন, তাঁহারা সকলেই সেই খোদা প্রেমিক ব্যক্তির অনুসারী ছিলেন, তিনি (সেই আল্লাহর ওলী) তাহাদিগকে নিজের কাশফের অবস্থা বর্ণনা করিলেনন, এবং বলিলেন যদি এখানে একটি শহর স্থাপন করা হয় তবে খুব ভাল হইবে।
সেই সমস্ত লোকগণেরও সেখানকার আবহাওয়া, অসংখ্য নদ-নদী, সজীব শ্যামল বৃক্ষরাজী ও লতা গুল্ম এবং বিভিন্ন দৃশ্য বড়ই হৃদয় স্পর্শী এবং অতি সুন্দর অনুভূত হইল, এবং এই জন্য সকলেই শহর স্থাপনের মতকে পছন্দ করিলেন। এছাড়াও উহা ব্যতিতও উহার আশে পাশে আর অন্য কোন শহর ছিল না, কেবল মাত্র এক ‘সামানা’ নামক শহর ছিল। যাহা সেরহিন্দ হইতে আনুমানিক ৫০/৬০ মাইল দুরে অবস্থিত ছিল (সামানা বহু প্রাচীন শহর) লোকেরা টাকা দাখিল করার জন্য সামানা যাইত। যে সমস্ত লোকগণ ধন ভান্ডার পৌছানোর জন্য যাইতেছিলেন, তাঁহারা সকলেই হজরত মাখদুম জাহানিয়্যাঁ শাহ্ (রহঃ) এর খেদমতে আসিলেন।
হজরত মাখদুম জাহানিয়্যাঁ শাহ্ (রহঃ) সম্রাট ফিরোজ শাহ তুঘলকের পীর ও মুর্শিদ ছিলেন) তাঁহার খেদমতে উপস্থিত হইয়া আরজ করিলেন যে, হুজুর! আপনি বর্তমান সম্রাট ফিরোজ শাহ্ তুঘলকের নিকট বলুন যে, তিনি এখানে একটি শহর স্থাপন করেন। আর সাথে সাথে সেই খোদা প্রেমিকের মোকাশাফার কথাও আরজ করিলেন। হজরত মাখদুম জাহানিয়্যাঁ শাহ্ (রহঃ) সেই সকল লোকের আবেদন কবুল করিলেন এবং নিজ আবাস ভূমি হইতে (যাহা উচাঁ আহমদপুর পূর্ব ভাওয়ালপুর পাকিস্থানে) দিল্লী অভিমুখে রওয়ানা হইলেন।
যখন সম্রাট ফিরোজ শাহ্ তুঘলক নিজ পীর ও মুর্শিদের আগমন বার্তা শুনিলেন তখন তিনি স্বীয় পীর মুর্শিদের প্রতি স্বাগতম জানানোর জন্য দিল্লী হইতে বাহিরের দিকে সুনিপথের নিকট আসিলেন এবং খুব সম্মানের সহিত তাঁহাকে দিল্লী শহরের শাহী মহলে লইয়া আসিলেন। সভার প্রথমেই হজরত শাখদুম জাহানিয়্যাঁ শাহ্ (রহঃ) সেই উদ্দেশ্য ব্যক্ত করিলেন। বাদশাহ তৎক্ষণাৎ তাহা মঞ্জুর করিয়া সেই সময়েই আদেশ জারী করিলেন যে, সাহারনাদের জঙ্গল কাটিয়া তথায় শহর বসানো হইবে।
সুতরাং হজরত ইমাম রফিউদ্দীন সাহেব (রহঃ) এর বড় ভাই খাওয়াজা ফাতহুল্লাহ সাহেবকে এই কাজের দায়িত্ব দান করা হইল। তিনি বাদশাহ ফিরোজ শাহ্ তুঘলকের উজির (মন্ত্রি) ছিলেন। বাদশাহ তাহাকে বলিলেন, আপনি দুই হাজার লোক লইয়া রওনা হইয়া পড়েন। খাওয়াজা ফতেহুল্লাহ সাহেব লোক-লস্কর লইয়া নির্দিষ্ট স্থানে উপস্থিত হইলেন।
তিনি সেথায় আসিয়া প্রাসাদ নির্মাণ কার্য্যে নিয়োজিত হইলেন। প্রথমে কেল্লার ভিত্তি সেই টিলার উপর স্থাপন করিলেন যেখানে জঙ্গল ছিল। প্রথম দিন কেল্লার ভিত্তি এক হাত উচুঁ করিয়া চারিদিক স্থাপন করা হইল, কিন্তু কি আশ্চর্য্য পরদিন সকালে উক্ত কেল্লার দেওয়াল বিধ্বস্ত দেখিলেন। মোটকথা, প্রতিদিন একই অবস্থা হইত, যখন এক হাত উচুঁ দেওয়াল নির্মিত হইত, তাহা রাত্রিবেলা পড়িয়া যাইত। এই সংবাদ বাদশাহ এর নিকট পৌঁছিলে, বাদশাহ উহার সংশোধনের ভার হজরত মাখদুম জাহানিয়্যাঁ শাহ (রহঃ) প্রতি অর্পণ করিলেন।
হজরত মাখদুম জাহানিয়্যাঁ শাহ (রহঃ) তাঁহার প্রধান খলিফা এবং নামাজের ইমাম, হজরত ইমাম রফিউদ্দীন (রহঃ) কে পাঠাইলেন, তিনি অধিক সময় সামানা শহরে অবস্থান করিতেন সামানা শহরও একটি প্রাচীন শহর যাহা বর্তমানে সাংরুর জিলার অন্তর্ভূক্ত, এবং উপদেশ প্রদান করিলেন যে, আপনি সেখানে যাইয়া প্রকৃত অবস্থাদী জিজ্ঞাসা ও অবলোকন করতঃ কেল্লা নির্মাণের কাজ শুরু করিবেন, যাহাতে কেল্লা সকল প্রকার খারাপী ও আফত হইতে বির্বিঘ্নে নির্মিত হয় এবং আপনি সেখানে যেন স্থায়ীভাবে অবস্থান করেন।
হজরত মাখদুম জাহানিয়্যাঁ শাহ (রহঃ) বলিলেন হে রফিউদ্দীন! সেখানকার বেলায়েত (ওলীত্ব) এবং কুতুবিয়্যাত (কুতুবের দায়িত্ব) আপনার উপর অর্পিত এবং সেই খোদা ভক্ত ব্যক্তির মোকাশাফাও আপনার হকের অর্ন্তভূক্ত। হজরত মাখদুম জাহানিয়্যাঁ (রহঃ) বলিলেন, সেই শিরোমণি দয়াল নবী (সাঃ) এর উম্মাতের দরদী মহান আল্লাহর বন্ধু বরকতের পিতা দ্বীনের সূর্য্য আপনারই বংশ হইতে আগমন করিবেন। তিনি নিজ হাতে একখানা ইট প্রদান করিয়া বলিলেন, ইহাকে কেল্লার ভিত্তিতে স্থাপন করিবেন।
সেরহিন্দের প্রতিষ্ঠাতা
হজরত ইমাম রফিউদ্দীন (রহঃ) স্বীয় পীর মুর্শিদ বুজুর্গের আদেশ পালনার্থে সেই স্থানে আগমন করিলেন এবং সেখানে অবস্থান করতঃ উক্ত কেল্লার ভিত্তি ৭৬০ হিজরী মোতাবেক ১৩৫৮ খৃষ্টাব্দে সেই ইটের দ্বারা শুরু করিলেন, যাহা হজরত মাখদুম (রহঃ) তাঁহাকে প্রদান করিয়াছিলেন। হজরত ইমাম রফিউদ্দীন (রহঃ) সেই ঘটনার দিকে মনোনিবেশন করিলেন, যে ঘটনার কারণে প্রতিদিন কেল্লা ধ্বংশ হইত, তিনি অবগত হইলেন যে, বাদশাহের লোকেরা জনৈক ওলীউল্লাহকে জোর পূর্বক ধরিয়া কার্য্যে লাগাইয়া রাখিয়াছে। যেহেতু আল্লাহর সেই প্রিয়জন নিজেকে গোপন রাখিয়াছিলেন, সেইহেতু কোন ব্যক্তি তাঁহাকে চিনিতে পারে নাই। আর ঐ কারণে তিনি নিজের বাতেনী তাওয়াজ্জুহুতে রাত্রীতে কেল্লার দেওয়াল ভাঙ্গিয়া দিতেন। পুনরায় হজরত ইমাম রফিউদ্দীন (রহঃ) সেই হাকিকাতের তরফ মোতাওয়াজ্জাহ হইলেন যে, কে সেই মহান ব্যক্তি, যিনি দেওয়ালকে ভাঙ্গিয়া দেন? তিনি অবগত হইলেন যে, খোদার দোস্ত হজরত শাহ শরফুদ্দীন বু-আ’লী কলন্দর (রহঃ) পানিপতী। হজরত রফিউদ্দীন (রহঃ) তাঁহার নিকট উপস্থিত হইয়া নিজ ভাইয়ের ভূলের জন্য অনেক দুঃখিত ও বিনীত হইয়া ক্ষমা প্রার্থনা করিলেন।
হজরত বু-আ’লী শাহ কলন্দর (রহঃ) বলিলেন, হে ইমাম সাহেব! এই শহর সেই মহান ব্যক্তির নিমিত্তে তৈরী করা হইতেছে, যিনি আপনার বংশধরের মধ্য হইতে আগমন করিবেন। আল্লাহ তায়া’লা আমাকে তাঁহার কার্য্যে নিয়োগ করিয়াছেন। তখন ইমাম সাহেব বলিলেন যে, প্রকৃত অর্থে যদি তাহায় হইয়া থাকে তবে আপনি উহা ভাঙ্গিয়া দিতেছেন কেন? কলন্দর সাহেব বলিলেন শুধুমাত্র ঐ জন্য যে, আপনি এখানে চলিয়া আসেন। এখন আপনি আসিয়াছেন, নিশ্চিন্ত ও সকল প্রকার বাধা-বিঘ্ন মুক্ত থাকিয়া কেল্লার নির্মাণ কার্য্য করিতে থাকুন। এখন কোন প্রকার ভয় করিবেন না। যখন কেল্লার কাজ সমাপ্ত হইল, তখন বাদশাহ আদেশ জারি করিয়া পাঠাইলেন যে, এই কেল্লা হজরত ইমাম রফিউদ্দীন সাহেব (রহঃ) এর প্রচেষ্টায় নির্মিত হইল এবং আবাদ হইল তখন হজরত ইমাম সাহেবই সেখানে অবস্থান করিবেনও উহার আয় উন্নতি নিজের দরিদ্র লোকজনের জন্য ব্যয় করিবেন। সুতরাং সেই সময় হইতে হজরত মুজাদ্দেদ আলফেছানী (রাঃ) এর পূর্ব পুরুষগণের আবাস গৃহ সাহরনাদ (সেরহিন্দ) শহরে প্রতিষ্ঠা লাভ করিল এবং আল্লাহ তায়া’লা উক্ত সাহরনাদ (সিংহদের গৃহকে) কে ফারুকী সিংহদের আবাস স্থলে পরিণত করিলেন।
হজরত ইমাম রফিউদ্দীন সাহেব (রহঃ) নিজের অবশিষ্ট জীবন সেরহিন্দেই অতিবাহিত করিলেন এবং শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করিলেন, ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলায়হি রাজিউন) সেরহিন্দ শরীফে তাঁহার মাজার অবস্থিত। যাহা ফতেহগড় সাহেব রেলওয়ে ষ্টেশনের নিকটবর্তী এবং হজরত মুজাদ্দেদ আলফেছানী (রাঃ) এর রওজা শরীফ হইতে প্রায় ১ মাইল দুরে অবস্থিত। সম্রাট ফিরোজ শাহ তুঘলক; হজরত ইমাম রফিউদ্দীন সাহেব (রহঃ) কে অনেক গ্রাম নজরানা স্বরুপ প্রদান করিয়াছিলেন এবং সেরহিন্দের ব্যবস্থাপনাও তাঁহাকে অর্পণ করিয়াছিলেন। ইহাতে কোন সন্দেহের অবকাশ নাই যে, তিনি বাত্বেনের বাদশাহী অর্জন করিয়া ছিলেন। কেননা তিনি সেখানকার কুতুব ছিলেন। সুতরাং সেই দৃষ্টিকোণ হইতে তিনি সেই শহরের কুতুব, প্রতিষ্ঠাতা এবং বিচারক হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেন।
তৎকালে সেরহিন্দ শরীফের বসতি বার ক্রোশ পর্য্যন্ত বিস্তৃত ছিল, সেরহিন্দের একটি বাজার ২/৩ ক্রোশ পর্য্যন্ত দীর্ঘ ছিল। ইহা ছাড়াও ছোট ছোট অনেক বাজারের সমাবেশ চতুর্দিকে স্থানে স্থানে ঘটিয়াছিল। আজ সেখানে একটি ছোট্ট বাজার ছাড়া অন্য কিছুর নাম-নিশানাও অবশিষ্ট নাই।
প্রথম সেরহিন্দ
হজরত ইমাম রফিউদ্দীন সাহেব (রহঃ) এর সঙ্গে আরও তিনজন আগমন করিয়াছিলেন, এবং তথায় বসতি স্থাপন করিয়াছিলেন। সেই সময় সেরহিন্দে চারটি গোত্র ছিল এবং তাঁহারা সেই চারজন বুজুর্গের বংশধর ছিলেন।
তাঁহার মা জননী
হজরত মুজাদ্দেদ আলফেছানী রাঃ এর আম্মাজান হজরত ছালেহা খাতুন (রহঃ) ছিলেন কুরআন সুন্নাহের পূর্ণ পাবন্দ। হাদিছ কুরআনের আদেশ নিষেধ নিজে পালন করিতেন এবং অন্যের স্ত্রীলোকদের পালনের জন্য আদেশ করিতেন। দিল্লী ও কানপুরের মধ্যবর্তী স্থানের জেলা আটোয়ার নিকটবর্তী একটি ছোট গ্রামে ছিল। যাহার নাম সিকান্দারাহ। এই গ্রামে এক পীর বুজুর্গ বাস করিতেন। তিনি সেই বুজুর্গের কন্যা ছিলেন। হজরত মুজাদ্দেদ আলফেছানী (রাঃ) এর আম্মাজান এরূপ আবেদা রমণী ছিলেন যে, তাঁহার নিকট সর্বদা মহিলাদের ভীড় লাগিয়া থাকিত। তিনি হাদিছ ফিকাহ সম্পর্কে ছিলেন খুব বিদূষী। তিনি বেনামাজী স্ত্রীলোকদের দেখিতে পারিতেন না।
একদা তাঁহার নিকট জনৈক জমিদার কন্যা কিছু উপঢৌকন লইয়া আসে, হজরত ছালেহা খাতুন (রহঃ) এই জমিদার কন্যাকে বলিলেন তোমার উপঢৌকন গ্রহণ করা খুব কষ্টকর যেহেতু তুমি পাঞ্জেগানাম নামাজ আদায় করনা। জমিদার কন্যা বলিলেন, আমি নামাজ কাজা করা পছন্দ করি না। হজরত আলফেছানী রহঃ এর জননী বলিলেন, দেখ বোন দুনিয়ায় আল্লাহ তায়া’লা তোমার সকল প্রকার জামিন। সুতরাং মিথ্যা কথায় লাভ কি? আর তুমিতো নামাজ পড়ই না, তৌবা কর অনুতপ্ত হও, মিথ্যা বলিও না, বেনামাজী দয়াল নবীর উম্মত নহে। যদি তুমি সত্যবাদিনী হও, তবে আল্লাহ তায়া’লার অসীম রহমত হইতে বঞ্চিত হইবে না। সঙ্গে সঙ্গে জমিদার কন্যার জবান হইতে বাহির হইল আমি লজ্জ্বায় আপনাকে মিথ্যা কথা বলিয়াছিলাম। আর জীবনে কোনদিন নামাজ কাজা করিব না। কথিত আছে তিনি কাশফের অধিকারীনী ছিলেন, নামাজী বেনামাজীর, সৎ, অসৎ এর পার্থক্য করিতে পারিতেন।
তাঁহার গর্ভে সাত জন পুত্র সন্তান জন্ম গ্রহন করেন, সকলেই আল্লাহর ওলী ছিলেন। যেমন-
১. হজরত শায়খ শাহ মুহাম্মদ (রহঃ) যিনি হজরত মখদুম (রহঃ) হইতে এলমে শরীয়ত ও এলমে মা‘রেফাত শিক্ষা লাভ করেন।
২. হজরত শায়খ মাহমুদ (রহঃ) যিনি হজরত খাওয়াজা বাকী বিল্লাহ (রহঃ) এর মুরিদ ছিলেন।
৩. তৃতীয় ব্যক্তির নাম ও অন্য কোন তথ্য সম্পর্কে কিছু জানা যায়না।
৪. হজরত শায়খ আহমদ ইমামে রব্বানী মুজাদ্দেদ আলফেছানী, সেরহিন্দী রহঃ);
৫. হজরত শায়খ গোলাম মুহাম্মদ (রহঃ);
৬. হজরত শায়খ মওদুদ (রহঃ); ও
৭. তাঁহার নাম ও জীবন বৃত্তান্ত জানা যায় না, ইনারা সকলেই আ’লেম ও উচ্চ মর্যদার অধিকারী ছিলেন।
হজরত মুজাদ্দেদ আলফেছানী (রহঃ) এর জন্ম
হজরত ইমামে রব্বানী মুজাদ্দেদ আলফেছানী (রহঃ) জুমা’র রাত্রী ১৪ই শাওয়াল ৯৭১ হিজরী মোতাবেক ১৫৬৩ খৃষ্টাব্দে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁহার নূরে সমস্ত জগত ও জগত বাসী নূরান্বিত হয়। তাঁহার নাম মোবারক- হজরত শায়খ আহমদ (রাঃ) সেরহিন্দী; কুনিয়াত- আবুল বারাকাত; উপাধী- বদর উদ্দীন; এবং খেতাব- কাইয়ূমী জামান, খাজিনাতুর রহমত, মুজাদ্দেদে আলফেছানী। তিনি হানাফী মাযহাবের অনুসারী ছিলেন। মুজাদ্দেদীয়া, নকশবন্দীয়া ছাড়াও কাদেরীয়া, সোহাওয়ার্দীয়া, চিশতিয়াও তাঁহার তরিকা।
সেরহিন্দের ফজিলত
হজরত ইমামে রব্বানী মুজাদ্দেদ আলফেছানী (রাঃ) স্বীয় মাকতুবাত শরীফের মধ্যে লিখিয়াছেন যে, বোখারা এবং সমরকন্দ হইতে বীজ লইয়া ভারত বর্ষের শীর্ষ স্থানে যাহা ইয়াসরব এবং বাতোয়াহার মৃত্তিকার বিধোত উর্ববরতা অর্জিত তাহাতে বপন করা হইয়াছে। অতঃপর বছরের পর বছর বহুকাল যাবত অনুগ্রহের বারিধারা দ্বারা প্রতি পালন (সেচ কার্য্য) করা হইয়াছে। যখন উহা ফুলে ফলে অপরুপ সৌন্দর্য্য ধারণ করে তখন সেই প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য জ্ঞান সমূহের ফল সেই বৃক্ষে আসে। অর্থাৎ হজরত মুজাদ্দেদ আলফেছানী (রাঃ) এবং তাঁহার সন্তানগণ। যিনি উম্মাতের সর্দার বা সম্রাট, সেই ভূমিতে (সেরহিন্দে) জন্ম গ্রহণ করেন।
আল্লাহ তায়া’লার অশেষ মেহেরবানী ও তাঁহার হাবিব (সাঃ) এর সদকায় শহর, সেরহিন্দ আমার জন্ম স্থান। এবং আমার কারণেই উক্ত স্থানের মর্যদা আরোও বৃদ্ধি করিলেন, যাহা ইতিপূর্বে ছিল না। যাহাকে তিনি আরোও অনেক প্রসিদ্ধ শহর ও প্রসিদ্ধ স্থানের উপরে মর্যাদায় উন্নিত করিয়াছেন। সেই জমিনে একটি উজ্জ্বল জ্যোতিস্ককে অর্পণ করেন, যিনি অনন্য গুণে গুনান্বিত এবং নজির বিহীন জ্যোতিষ্কেরে মধ্য হইতে গৃহিত হইয়াছেন।
আখেরী জামানার শেষ অসিলা, হজরত মুজাদ্দেদে আলফেছানী (রাঃ) সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে বইটি আজই সংগ্রহ করুন।
Post a Comment for "রওজায়ে সেরহিন্দ"